জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি : প্রাচীন জৈন্তারাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা ও ধ্বংসাবশেষ মেঘালিথ চিহ্নের আদলে স্থানীয়দের উদ্যোগে জৈন্তারাজ্যের সর্বপ্রথম মসজিদটি পাশ থেকে সরানো হলো ময়লার ভাগাড়। সব কিছুতে সরকারি উদ্যোগে হলে কখনো এই মসজিদটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেনি কোন প্রশাসন।
ইতিহাস হতে জানাযায়, ১৮০০ শতকের প্রথম দিকে ছোট পরিসরে জৈন্তারাজ্যের সদরে চৌরিহাটি গ্রামে প্রথম মসজিদটি নির্মিত হলেও সেই সময়কার ধর্মীয় বৈষম্য ও ষড়যন্ত্র স্বীকার হয়ে উপজেলার নিজপাট বন্দরহাটি গ্রামে স্থানান্তর করা হয়। মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম উপসনালয় মসজিদটি।
দীর্ঘ দুই শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও জৈন্তারাজ্যের ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা ইরাদেবী বাড়ী, সারিঘাট পান্থশালা, বড়দেউল, রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন স্থাপনা সংস্কার করা হয় সরকারি ভাবে। কিন্তু মুসলিম সম্প্রদায়ের স্মৃতি বিজড়িত চৌরিহাটি গ্রামের প্রথম মসজিদ, পাঁচ পীরের মোকাম, ববরবন্দ গ্রামের শাহজির মোকাম ও রুপচেং গ্রামের মাঝের বিলে অবস্থিত উমাগড় মন্দিরটি সংস্থার করেননি। ইতোমধ্যে স্থানীয়দের উদ্যোগে জৈন্তারাজ্যের সর্বপ্রথম মসজিদটি পাশ থেকে সরানো হলো ময়লার ভাগাড়।
বিগত আগষ্ট মাসের শেষ দিকে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে বড়দেউল অংশে ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সংস্কার করে সেখানে নান্দনিক ফুলের বাগানে পরিনত করা হয়।ঐসময় জৈন্তাপুর সদর এলাকায় বানিজ্যিক ও আবাসিক বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া সদররের কিছুটা অদূরে চন্দ্রাবিল এলাকাকে নির্ধারণ করে দেন।
এর পরে স্থানিয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ময়লা আবর্জনা নিয়মিত তাদের ময়লা সংরক্ষণ করলেও পরবর্তীতে বড়দেউল থেকে ২শত মিটার দূরে পাঁচ পীরের মোকাম ও ঐতিহাসিক জৈন্তা রাজ্যের প্রথম মসজিদের আশপাশে ময়লা ফেলতে শুরু করে। মাত্র তিন মাসের মাথায় এলাকাটি বড় ময়লার ভাগাড়ে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে।
এলাকার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সহ আশপাশের সাধারণ মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে থাকে। প্রাথমিক ভাবে উক্ত স্থান হতে স্থানীয় চৌরিহাটি সেবা সংঘের উদ্যোগে ও তাদের নিজস্ব অর্থায়নে ময়লার ভাগাড় অপসারণ সহ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলো দৃশ্যমান করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
জৈন্তারাজ্যের প্রথম মসজিদের সর্বশেষ নিদর্শন, পরিত্যক্ত কুয়া ও কয়েকজন মুসলিম পীরে কবরস্থানের আশপাশ হতে ময়লা আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় আগাছা অপসারণ সহ পুড়িয়ে ফেলে পরিস্কারের কাজ চলছে। এলাকার বাউন্ডারি দেয়ালে নতুন রং করে সেখানে জনসচেতনতামুলক বানী লিখে হয়েছে। চৌরিহাটি সেবা সংঘের অর্থায়নে কাজ সংস্কার করা হয়।
স্থনীয় ব্যবসায়ী ও চৌরিহাটি সেবা সংঘের অন্যতম সদস্য আব্দুস সালাম জানান, স্থানীয় ভাবে অর্থ সংগ্রহ করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। স্থানটিতে আরো সংস্কার বিশেষ করে মসজিদ ও মোকাম গুলো সংস্কার প্রয়োজন। সে কারণে তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করার আহবান জানান।
জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহানা জাফরিন রোজী চৌরিহাটি সেবা সংঘের কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন, বড়দেউল এলাকায় ভয়াবহ ময়লার ভাগাড় অপসারণ করার পর স্কুলের দ্বিতীয় গেইটের পাশে পুনরায় ময়লার ভাগাড় সৃষ্টির ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিলো শিক্ষার্থীরা। বড়দেউলের মত উক্ত স্থানটিতে ঐতিহাসিক রাজবাড়ীর অংশ হিসেবে সংরক্ষণ ও সংস্কার করতে উপজেলা প্রশাসনের আহবান জানান।
ইমরান আহমদ সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে একটা ভোগান্তি শেষ হতে না হতেই পুনরায় মানুষের অসচেতনতার কারণে আবার ভোগান্তি শুরু। ম্থানীয়দের উদ্যোগে ময়লা অপসারণ সহ কিছু সংস্কার কাজ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন বিগত সময় বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর ও মেঘালিথ টম্বের উদ্যোগে ইরাদেবী রাজবাড়ী সংস্কার ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বড়দেউল ও রাজবাড়ী মাঠ সংলগ্ন মন্দির সংস্কার করা হয়েছে। তেমনি জৈন্তারাজ্যের ঐতিহাসিক প্রথম মসজিদ ও পাঁচ পীরের মোকাম, উপজেলার ববরবন্দ গ্রামের অবস্থিত শাহজির মোকাম, রুপচেং গ্রামের মাঝের বিলে অবস্থিত উমাগড় মন্দিরটি স্থায়ী সংস্কার অতীব জরুরি। কারণ উক্ত স্থান কোন দূর্গম এলাকায় নয় বরং প্রতিদিন শত শত মানুষ চলাচলের মত জনবহুল এলাকায় অবস্হিত। তিনি বলেন উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে সংস্কার করা হলে যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীরা করবে। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জর্জ মিত্র চাকমার প্রতি উক্ত স্থান গুলোর সংরক্ষনে সুদৃষ্টি দেয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি আরো জানান বর্তমান মসজিদ ও মোকাম এলাকা হতে সংস্কারের অংশ হিসেবে পুরো ময়লার ভাগাড়কে অপসারণ করে পাশ্ববর্তী দেয়ালে জনসচেতনতামুলক বানী লেখা হয়েছে। সেই সাথে ময়লা আবর্জনা না ফেলতে স্থাপন করা হয়েছে নির্দেশনা। পাশাপাশি রাতের আধার কাটতে উক্ত স্হানে সংযোজন করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক বাতি।